বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ০৩:৫৩ পূর্বাহ্ন

শিক্ষার্থীর জন্য হচ্ছে ইউনিক আইডি পরে রূপান্তর হবে এনআইডিতে

শিক্ষার্থীর জন্য হচ্ছে ইউনিক আইডি পরে রূপান্তর হবে এনআইডিতে

স্বদেশ ডেস্ক:

সিভিল রেজিস্ট্রেশন অ্যান্ড ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস (সিআরভিএস) বাস্তবায়নের আলোকে দেশের ৩ কোটির বেশি শিক্ষার্থীর জন্য ইউনিক আইডি (একক পরিচয়) দেওয়ার পরিকল্পনা করছে সরকার। ৫ বছর বয়সী প্রাক-প্রাথমিক থেকে ১৭ বছর বয়সের দ্বাদশ শ্রেণির সব শিক্ষার্থী পাবে এ আইডি। এতে ১০ বা ১৬ ডিজিটের শিক্ষার্থী শনাক্ত নম্বর থাকবে। যেসব তথ্য ওই শিক্ষার্থীর জাতীয় পরিচয়পত্রের সঙ্গে সমন্বয় করা হবে। জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরিতে আলাদা করে তথ্য সংগ্রহ করার প্রয়োজন হবে না। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্রে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা আমাদের সময়কে জানান, বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) আইইআইএমএস প্রকল্পের মাধ্যমে এ পদ্ধতি চালু করা হবে। এ প্রকল্পের আওতায় ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীর ডেটাবেস প্রস্তুত করে তাদের ইউনিক আইডি কার্ড দেওয়া হবে। এ জন্য শিক্ষার্থীদের তথ্য সংগ্রহের কাজ সফলভাবে বাস্তবায়নে মাঠপর্যায়ের শিক্ষা কর্মকর্তা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।

মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের ইউনিক আইডি দেওয়া ও ডেটাবেস প্রস্তুতের কাজ শিগগিরই শুরু হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগ, সব অধিদপ্তর-শিক্ষা বোর্ড ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য সমন্বিত শিক্ষা তথ্য ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক প্রফেসর ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক গতকাল আমাদের সময়কে জানান, মাউশি থেকে তথ্য চেয়ে সব আঞ্চলিক শিক্ষা অফিসে চিঠি পাঠানো হয়েছে। ব্যানবেইসের আইইআইএমএস শীর্ষক প্রকল্পের মাধ্যমে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুটি বিভাগ এবং এর আওতাধীন সব সংস্থা, অধিদপ্তর, শিক্ষা বোর্ড এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য সমন্বিত শিক্ষা তথ্য ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম নেওয়া হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় ‘সিভিল রেজিস্ট্রেশন অ্যান্ড ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস (সিআরভিএস)’ ব্যবস্থার আলোকে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণির সব শিক্ষার্থীর ডেটাবেস প্রস্তুত এবং ইউনিক আইডি প্রদান কার্যক্রম শিগগিরই শুরু হবে। এ জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে নির্ধারিত ছকের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মৌলিক তথ্য ও শিক্ষাসংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহের পর ডেটা এন্ট্রির কাজ সম্পন্ন করতে হবে। তাই আঞ্চলিক, জেলা, উপজেলা পর্যায়ে কর্মরত কর্মকর্তা এবং সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের শিক্ষার্থীদের সঠিক তথ্য দিয়ে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ এ কাজ সফলভাবে বাস্তবায়নে সহযোগিতা করতে বলেছে শিক্ষা অধিদপ্তর।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলম আমাদের সময়কে জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের আওতায় বাস্তবায়নাধীন প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের প্রোফাইল প্রণয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে এই ইউনিক আইডি দেওয়া হবে শিক্ষার্থীদের। যার তথ্য ছক প্রকাশ করা হয়েছে। তিনি বলেন, প্রকাশিত শিক্ষার্থীদের প্রোফাইল প্রণয়নের ছকে শিক্ষার্থীর নাম-ঠিকানাসহ যাবতীয় তথ্য চাওয়া হয়েছে। তথ্য প্রত্যয়ন করবেন শ্রেণিশিক্ষক ও প্রধান শিক্ষক।

জানা গেছে, শিক্ষার্থী প্রোফাইল প্রণয়ন ছকে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম, উপজেলা, জেলা, ইএমআইএস নম্বর দিতে হবে। শিক্ষার্থীর নাম বাংলায় ও ইংরেজি অক্ষরে লিখতে হবে। শিক্ষার্থীর জন্মসনদ নম্বর, জন্মতারিখ, জন্মস্থান (জেলা), জেন্ডার (নারী পুরুষ ও অন্য), জাতীয়তা, ধর্ম উল্লেখ থাকতে হবে। শিক্ষার্থী কোন শ্রেণিতে অধ্যয়নরত এবং কোন শাখায় তাও উল্লেখ করতে হবে রোল নম্বরসহ। কাব স্কাউট সদস্য কিনা তাও জানাতে হবে। প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে বাকপ্রতিবন্ধী, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী, শ্রবণপ্রতিবন্ধী, মানসিক প্রতিবন্ধী তা উল্লেখ করতে হবে। উল্লেখ করতে হবে শিক্ষার্থীর রক্তের গ্রুপ। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিক্ষার্থী হলে গোষ্ঠীর নাম উল্লেখ করতে হবে। প্রত্যেক শিক্ষার্থীর প্রথমে মা ও পরে বাবার নাম বাংলায় এবং ইংরেজি অক্ষরে লিখতে হবে। পিতা-মাতার তথ্যের সঙ্গে এনআইডি নম্বর অথবা জন্মনিবন্ধন নম্বর, মোবাইল নম্বর, জন্মতারিখ এবং মাতা ও পিতার পেশাসহ মৃত কিনা তাও উল্লেখ করতে হবে। পিতা-মাতার অবর্তমানে অভিভাবকের তথ্য দিতে হবে একইভাবে। অভিভাবকের সঙ্গে শিক্ষার্থীর সম্পর্ক উল্লেখ করতে হবে।

শিক্ষার্থীর বর্তমান ঠিকানা বিভাগ, জেলা, উপজেলা/থানা, পোস্ট অফিস ও পোস্টকোড। সিটি করপোরেশন হলে বাসার হোল্ডিং নম্বর, ওয়ার্ড মহল্লা, রাস্তার নাম নম্বর পোস্টঅফিস ও পোস্টকোড নম্বর উল্লেখ করতে হবে। শিক্ষার্থীর যাবতীয় তথ্য শ্রেণিশিক্ষক ও প্রধান শিক্ষক প্রত্যয়ন করবেন। প্রত্যয়নকারী শিক্ষকের নাম মোবাইল নম্বর ও এনআইডি নম্বর নির্ধারিত ছকে পূরণ করতে হবে।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের আওতায় বাস্তবায়নাধীন প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের প্রোফাইল প্রণয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের প্রোফাইল তৈরি করা হবে এবং ইউনিক আইডি কার্ড দেওয়া করা হবে। ইউনিক আইডি কার্ড প্রস্তুতের জন্য প্রাথমিক পর্যায়ের সরকারি-বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ছাড়াও সরকারি-বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সঙ্গে সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এবং এবতেদায়ি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের তথ্য জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের মাধ্যমে সংগ্রহ করেছে অধিদপ্তর।

কয়েক বছর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি সমন্বিত ও কার্যকর সিআরভিএস ব্যবস্থা গড়ে তোলার নির্দেশ দিয়েছিলেন। প্রত্যেক নাগরিকের একটি ইউনিক আইডি তৈরি করার নির্দেশনার পর শিক্ষার্থীদের জন্য ইউনিক আইডির কার্যক্রম বাস্তবায়নে যাচ্ছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877